সম্পাদকীয়- ইসলামি দলগুলোর সমাবেশে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় অথচ ভোটকেন্দ্রে তাদের সেরকম ভোট নেই , ভোট পড়েও না, এর কারণ কি? চলুন একটু খুঁজে দেখার চেষ্টা করি।
ইসলাম শান্তি, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। অথচ সেই ইসলামের পতাকা বহনকারী দলগুলো নিজেরাই আজ চরমভাবে বিভক্ত। তারা একত্রে নামাজ পড়লেও এক প্ল্যাটফর্মে রাজনীতি করতে পারে না। কেন? চলুন, ভেঙে দেখি ইসলামি দলগুলোর ঐক্যহীনতা ও ভোট রাজনীতিতে ব্যর্থতার প্রধান কারণগুলো:
১. আদর্শিক দ্বন্দ্ব ও মতপার্থক্য- ইসলামি দলগুলো নানা মাজহাব ও মতাদর্শের অনুসারী। দেওবন্দী, সালাফি, জামাতি, সূফি, খেলাফতবাদী—এদের মধ্যে কুরআন-হাদীসের ব্যাখ্যা ও ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে রয়েছে মতানৈক্য। ফলে মিলন নয়, বরং বিভক্তিই নিয়ম।
২. নেতৃত্বকেন্দ্রিক কোন্দল- প্রায় সব দলই ব্যক্তিনির্ভর। একজন নেতা গেলে দল দুই ভাগ। ক্ষমতা কেন্দ্রিক লড়াই ও নেতৃত্বে বসে থাকার লোভ ঐক্য বিনষ্ট করে। ব্যক্তির গুরুত্ব আদর্শের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে।
৩. কৌশলগত বিভ্রান্তি- এক দল ভোটে অংশ নেয়, আরেক দল বর্জন করে। কেউ সরকারের শরিক হয়, কেউ বিরোধী, আবার কেউ শুধু হরতাল-ধর্মঘটের রাজনীতি করে। এর ফলে সাধারণ মানুষ দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে।
৪. বাস্তব ইস্যুতে নিরবতা- ইসলামি দলগুলো ধর্মীয় বিষয়ে সরব হলেও—দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি,শিক্ষা ও চিকিৎসা সংকট, দুর্নীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান নেয় না। ফলে তাদের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়।
৫. তরুণ ও শিক্ষিত শ্রেণি থেকে দূরত্ব- আধুনিক তরুণ প্রজন্ম যখন জ্ঞান, যুক্তি ও বাস্তবমুখী চিন্তা চায়, তখন ইসলামি দলগুলো অনেক সময় অতীতমুখী, কঠোর ও অতিরঞ্জিত ভাষা ব্যবহার করে। এতে তারা প্রজন্মের সাথে সংযোগ হারায়।
৬. মিডিয়ায় নেতিবাচক ইমেজ- গণমাধ্যমে তাদের ‘ধর্মব্যবসায়ী’, ‘উগ্র’ বা ‘গোঁড়া’ হিসেবে তুলে ধরা হয়। কোনো কোনো দলের কথায় সহিংসতা বা হুমকি থাকায় জনগণের ভীতি জন্মে।
৭. নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা- এক এলাকার দুই ইসলামি দল একে অন্যকে ‘বেদাতি’ বা ‘গুমরাহ’ বলে। ফলে নিজেদের ভোট নিজেই ভাগ করে দেয়। শত্রু যেন দরজা খোলাই রেখে দেয়।
৮. ইসলাম চর্চা ও বাস্তব আচরণে ফারাক- ধর্মের কথা বলে যারা মঞ্চ কাঁপান, অনেক সময় তাদের নিজের জীবনেই ইসলামের ছাপ খুঁজে পাওয়া যায় না। জবাবদিহিতা নেই, আত্মগৌরব আছে। এতে আস্থা হারায় মানুষ।
তাহলে করণীয় কী?
-আদর্শগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও যৌথ লক্ষ্যে ঐক্য গঠন
-তরুণদের কাছে সহনশীল, আধুনিক ও দাওয়াহভিত্তিক রাজনীতি তুলে ধরা
-শুধু ধর্ম নয়, জনগণের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে সক্রিয় হওয়া
-নেতৃত্বে জবাবদিহিতা এবং মডেল হিসেবে জীবন গড়ে তোলা
উপসংহার- ঐক্যহীনতা, বাস্তব রাজনীতির দূরদৃষ্টি না থাকা এবং আত্মকেন্দ্রিক নেতৃত্ব—এসব মিলেই ইসলামি দলগুলো নির্বাচনী ব্যর্থতার মুখে পড়ে। ইসলামের মহান আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে নিজেদের সংশোধন জরুরি।
যে ইসলাম শান্তির কথা বলে, তার কর্মীরা কেন হানাহানিতে লিপ্ত হবে? যে ধর্ম ভ্রাতৃত্ব শেখায়, তার অনুসারীরা কেন একে অপরকে শত্রু ভাববে?
✍️ কলমে-: মাঈন উদ্দীন - প্রকাশক, টি টাইমস নিউজ।
📅 তারিখ: ১ জুলাই ২০২৫